বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৫:২২ পূর্বাহ্ন

ব্র্রুকলিনে পিএস ২১৪ কে স্কুলে বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান

ব্র্রুকলিনে পিএস ২১৪ কে স্কুলে বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান

স্বদেশ ডেস্ক: ব্রুকলিনের পিএস২১৪কে স্কুলে প্রিকে এবং ফার্স্ট গ্রেডের স্কুলে শিক্ষার্থীদের ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান করা হচ্ছে। তারা শিক্ষা পাঠ্যক্রমের ৮০ শতাংশ শিখছে ইংরেজিতে আর ২০ শতাংশ শিখছে বাংলায়। গত দুই বছরে সেখানে দুটি ক্লাসে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় শিক্ষা কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা রয়েছে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য ক্লাসেও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা চালু করার। এই তথ্য জানিয়েছেন স্কুলের সহকারী ভাইস প্রিন্সিপাল ইসরাত নালী।
ইসরাত নালী জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে পিএস২১৪কে স্কুলের সহকারী অধ্যক্ষ। এর আগে ১০ বছর অন্য দুটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে একটি পিএস৫০৩কে (PS503K) এবং অন্যটি পিএস৩৬১কিউ (PS361Q)। এগুলো দ্য উডসাইড কমিউনিটি স্কুল।
ইসরাত নালীর মতে, পিএস৩৬১কিউতে তার গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ভূমিকা ছিল। পিএস৩৬১কিউ একেবারে নতুন স্কুল ছিল। তিনি ৭ বছর সেখানে একজন শিক্ষক নেতা ও শ্রেণিশিক্ষক হিসেবে নিবিড়ভাবে কাজ করেন। ২০২০-২০২১ সালে মহামারি চলাকালে পিএস৩৬১কিউতে তিনি স্কুল বিল্ডিং লিডার এবং স্কুল ডিস্ট্রিক্ট লিডারশিপ লাইসেন্স এবং কলেজ অব সেন্ট রোজের সঙ্গে মাস্টার্স প্রোগ্রামে কাজ করেন। পিএস৩৬১কিউ এর অধ্যক্ষ মিসেস হুওয়াং (Ms.Hwang) তাকে স্কুলের নেতৃত্ব পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন। ইসরাতও কৌতূহলী ছিলেন এবং সাংস্কৃতিকভাবে আরো বিভিন্ন কাজ করতে চেয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি হলো প্রোগ্রামিং এবং পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে সুযোগ তৈরি করা। বাংলা ভাষা ছিল ইসরাতের সব সময়ের প্রাধান্য দেওয়া একটি বিষয়। ওই সময় উডসাইডে বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশ বাস করত। মূলত বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্যই তিনি এটি করতে চেয়েছিলেন।
ইসরাত নালী বলেন, আমার লিডারশিপ ইন্টার্নশিপের অংশ হিসেবে একটি আফটার স্কুল ভার্চুয়াল বাংলা কালচারাল ক্লাস তৈরি করি। আমার সঙ্গে সহ-শিক্ষা দেওয়ার জন্য মিস প্রিয়া ডায়াসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি নাচের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমি প্রত্যাশা এবং নির্দেশিকার সঙ্গে কার্যত আমার স্কুলের শিক্ষাদান এবং শেখার প্রত্যাশার বিষয়ে আফটার স্কুল প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধানে সাহায্য করতাম। সেই সময়ে প্রোগ্রামটি বাংলাদেশিদের থেকে শুরু করে ফিলিপাইন, মেক্সিকো, চীন, কলম্বিয়া ও নেপালের শিক্ষার্থীদের জন্য অফার করা হয়েছিল, যারা বাংলা সংস্কৃতি ও সংগীত সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী। আমি বাংলা ভাষাকে একটি দ্বৈত ভাষা প্রোগ্রাম শুরু করতে চেয়েছিলাম। ২০২১ সালের জুনে ওজোন পার্কের পিএস২১৪ স্কুলের পক্ষ থেকে আমাকে সহকারী অধ্যক্ষ পদে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আমি প্রস্তাবটি গ্রহণ করি ও সেখানে কাজ শুরু করি।
ওই স্কুলে কিন্ডারগার্টেন, ফার্স্ট গ্রেড, স্কুল কমিউনিকেশন, ইএনএল বিভাগ, স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিটিজ, সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকলাপ, অভিভাবকদের জন্য কর্মশালা, মেয়েদের ক্ষমতায়ন এবং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন ও ইএনএল স্টুডেন্টদের পড়ান এমন শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান করার ভূমিকা গ্রহণ করা হয়। এরপর পিএস২১৪কে এর প্রিন্সিপাল মিসেস মাহাবির প্রস্তাব করেন, তিনি একটি বাংলা দ্বৈত ভাষার প্রোগ্রাম শুরু করতে চান। কারণ আমাদের স্কুল এলাকায় অনেক বাংলাদেশি বাস করেন। তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন প্রোগ্রামটি তত্ত্বাবধান ও ডিজাইন করি। আমি তার প্রস্তাবে সাগ্রহে রাজি হই। আমাকে প্রোগ্রাম ডিজাইন করা, গবেষণা করা, পাঠ্যক্রম তৈরি করা, সমৃদ্ধকরণ, শিল্পকলা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা উদ্যোগের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আমি স্কুলে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য এবং সমান প্রতিনিধিত্বসহ সমস্ত সাংস্কৃতিক পটভূমির প্রতিনিধিত্ব এবং সম্মান করতে চাই। এমন অভিজ্ঞতা তৈরি করতে সাহায্য করা, যা ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করে এবং স্কুলে জীবনের সকল স্তরের সকল সদস্যের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। আমেরিকান ও বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক পটভূমি রয়েছে এমন শিশুদের এখানে বাংলা শেখানো আমার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিষয়টি চ্যালেঞ্জিংও ছিল। এটাও খেয়াল রেখেছিলাম, পাঠ্যক্রম দুটি পরিচয়ের মধ্যে তারা আনন্দ খুঁজে পায় এবং শিখতে পারে। ইসরাত নালী আরো বলেন, আমি পিএস২১৪কে-এ বাংলা গান ও নৃত্যের জন্য আমার কালচারাল কম্পোনেন্ট হিসেবে মিস প্রিয়া ডায়াসকে নিয়ে এসেছি। মিসেস প্রিয়া ডায়াসের সারা বিশ্বের অনেক লোকের সঙ্গে কাজ করার বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি তার বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা আমাদের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসেন এবং শেয়ার করেন।
ইসরাত নালী শিক্ষকদের সম্পর্কে বলেন, বাংলা দ্বৈত কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রথম বছরে একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত নতুন শিক্ষক মিসেস খানকে খুঁজে পেয়েছিলাম, যিনি ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায়ই দক্ষ ছিলেন। বাংলা ভাষায় কারিকুলাম চালু করতে গিয়ে আমরা উভয়েই ধীরে ধীরে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হই। আমাদের কাছে কোনো উপকরণ, হাতে-কলমে শেখার সংস্থান, বাংলা গেম বা শিশুসাহিত্য ছিল না। সম্পূর্ণ নিজেদের মতো করে নতুন একটি কারিকুলাম তৈরি করা হয়। আমাদের লক্ষ্য, বর্তমান প্রজন্মকে শিক্ষা দিতে হবে তাদের স্বাধীন চিন্তাধারাকে প্রাধান্য দিয়ে। তাদের একুশ শতকের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা বাংলা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ধারণা লাভ করুক। ইসরাত ছাড়াও ওই স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তাহমিনা খান ও সাজেদা হক। তাদের প্রত্যাশা, বাংলা প্রোগ্রামটি সমৃদ্ধ, প্রামাণিক এবং উচ্চ পারফরম্যান্সকারী শিক্ষার্থী তৈরি করবে। ইসরাত নালী জানান, গত বছর স্কুলে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করা হয়েছে। বিজয় দিবসও উদযাপন করা হয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877